এবার স্বাধীনতা পুরস্কার যাদেরকে দেয়া হচ্ছে তাদের নামের তালিকার ওপর চোখ বুলিয়ে লজ্জা বোধ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সহ এরা কেউ স্বাধীনতা পুরস্কার এতোকাল পাননি। তাহলে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে কারা? খালেদা জিয়ার সরকার মুজিবুর ও জিয়াউর এই দুই রহমানকেই স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়েছিল। তা নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা কতো রকমের বিতর্কই না সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছে!
জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের সি-ইন-সি ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর সর্বোচ্চ অধিনায়ক হিসেবে তিনি বীরত্বসূচক কিংবা সাহসিকতার কোনো খেতাব বা গ্যালান্ট্রি এওয়ার্ড নেননি। তাহলে তাঁকে এতোকাল স্বাধীনতা পুরস্কার কেন দেওয়া হয়নি? তিনি কি ধইঞ্চ্যা? ওসমানী না পেলে স্বাধীনতার পুরস্কার আর কার প্রাপ্য? এবারের তালিকার আরো অনেকের ব্যাপারেই একই কথা প্রযোজ্য।
বদরুদ্দীন উমর পদক-পুরস্কার নেবেন কি নেবেন না, সেটা তাঁর স্বাধীনচেতা এখতিয়ার। কিন্তু রাষ্ট্র উমরকে বাদ রেখে দেশের আর কোন্ বুদ্ধিজীবীকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে পারে? কবি আল মাহমুদ, বিজ্ঞানী অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম নকশাকার নভেরা আহমেদ, পপসম্রাট আজম খান সকলের ব্যাপারেই একই কথা খাটে।
শহীদ আবরার নিয়ে অনেকের মনে খটকা আছে। অনেকে বলছেন, এটা একটা আবেগী সিদ্ধান্ত। জীবন দেওয়া ছাড়া আর কোন্ ক্ষেত্রে তার কী অবদান আছে? আমি বলি, আবেগ এই জাতির অন্তর্গত বৈশিষ্ট। আবেগশূন্য হলে আমাদের আর কিছুই থাকেনা। জীবন দেওয়াকে অবদান হিসেবে স্বীকার না করাটা আমার কাছে নিষ্ঠুরতা বলে মনে হয়। দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার অতিকায় প্রতিবেশীর পানি আগ্রাসনের শিকার। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এক মেধাবী তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন।
তার আত্মদান নতুন প্রজন্মের মধ্যে অভূতপূর্ব দেশপ্রেমের যে উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে তা অবিষ্মরণীয়। এমন দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা অনেক শতাব্দির মণীষীর কাজ। সেটাই জীবন দিয়ে করে গেছেন আবরার। এই অবদানকে যারা তুচ্ছ করে দেখতে চান, তাদের হৃদয়কে আরো প্রশস্ত করে দেওয়ার জন্য আমি প্রার্থনা করি। এবারের স্বাধীনতা পুরস্কার আমাদের অনেক গ্লানি, লজ্জা, পাপ, সংকীর্ণতা এবং দীনতা ও হীনতাকে মোচন করেছে। ইতিহাসের রেকর্ডকে শুদ্ধ করেছে।
এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারকে যারা এভাবে মহিমামণ্ডিত করলেন তাদেরকে অভিনন্দন। ▪️
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)